Sunday, July 30, 2017

অদ্ভুত ভূততত্ত্ব

৩০-জুলাই-২০১৭
মিরপুর, ঢাকা


সব ভূত অদ্ভুত কিম্ভুতকিমাকার
অতিশয় অব্যয়, কতিপয় কদাকার,
অসময়ে অন্যায়, অভিনয়, অপচয়,
অন্বয়-প্রত্যয়ে মাঝরাতে ধরে ভয়।

নর্তন কুর্দনে কাপুরুষে কুপোকাত
রাম-নাম কীর্তনে দূর্ঘটে কাটে রাত,
দুর্মদ দুর্ভোগে দুর্বাক পিত্ত,
ভূতেদের ঢং দেখে যায় জ্বলে চিত্ত।

২০০৮ এর শুরুর দিকে কোন এক সন্ধায়...
-------------------------------------------

এই কবিতাটা লিখেছিলাম ২০০৮ এর দিকে। শ্রদ্ধ্যেয় সোহাগ ভাইয়ের রুমে বসে। যতদুর মনে পড়ে ক্যাম্পাসে তখন ঝামেলা চলছিল। ভিসি পরিবর্তন সহ রাজনৈতিক অনেকগুলো ইস্যুর সাথে একটা  ইস্যু ছিল, থিয়েটার, নিলীমা, ডিবেট সোসাইটি সহ সব সাংস্কৃতিক সংগঠনের রুম কেড়ে নেওয়া। এমনিতেই তো আমাদের রিহার্সেলের জায়গা ছিল না তার উপর জোর করে ক্যাফেটেরিয়ার উপরের একটু খানি জায়গা কেড়ে নেওয়াতে সবাই বেশ মুষড়ে পড়েছিল। শেষে ঠিক করা হল এই সমস্যার উত্তরন করতে সব সংগঠনকে একীভূত করে সাংগঠনিক জোট করা হবে। সোহাগ ভাই তখন নিলীমার সভাপতি। কিষান থিয়েটারের সভাপতি তখন সৈকত ভাই, কৌশিকদা সেক্রেটারি, নির্যাস আর আমি কিষান থিয়েটারের দুই মহা ফাকিবাজ এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি। ডিবেটের সভাপতি ছিলেন যতদূর মনে পরে উজ্জ্বল ভাই। তাকে সবচেয়ে সাংগঠনিক জোটের সভাপতি করে আমরা হই হই করতে করতে গেলাম ভিসির কাছে দাবি নিয়ে। তখন ভিসি ছিলেন শ্রদ্ধ্যেয় শাহ-ই-আলম স্যার। নতুন ভিসি হয়ে এসে এত এত ঝামেলায় পড়ে এমনিতেই তিনি তখন ব্যতিব্যস্ত। আর আমরাও তখন সবাই হই হই করতে করতে তার রুমে।

অনেক্ষন অপেক্ষা হই হই করার পর ভিসি স্যারের দেখা মিলল।  স্যার আমাদের সবাইকে তার কনফারেন্স রুমে বসালেন। তখনো প্রশাসনিক বিল্ডিং এর কাজ চলছে। ভিসি স্যারের রুম একাডেমিক বিল্ডিং এই ছিল। স্যার এসে গম্ভিরভাবে বললেন,  তোমাদের সমস্যা কী বল। সবাই এদিক ওদিক মুখ চাওয়াচাওয়ির মাঝে সোহাগভাই উঠে দাড়ালেন। সব সময়ই সোহাগ ভাই জোস বক্তা ছিলেন। নীলিমায় দেখেছি, শুনেছি তার কথা। এইবারও সোহাগ ভাই শুরু করলেন সুন্দর ভাবে। এতদিন পরে সবটুকু খেয়াল নেই সেগুলো। তবে এত টুকু এখনো মনে আছে, তিনি শুরু করেছিলেন আমাদের সমস্যা দিয়ে। কেন আমাদের চর্চা করার জায়গা নেই, কেন সংগঠন দরকার সব। অন্তত ১০ মিনিট লম্বা বক্তৃতা দেবার পর ভাই একটু হাইপার হয়ে গিয়েছিলেন। শেষ করেছিলেন এভাবে- "যদি এই ভিসি আমাদের সঙ্গঠন কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ সুবিধা এবং স্বাধীনতা না দিতে পারে তবে আমি ভিসির পদত্যাগ দাবি করছি।" আমরা জুনিয়ার রা সাথে সাথে টেবিল থাবড়ে, হট্টগোল বাধিয়ে দিয়ে তাল দিলাম। ভেতরে ভেতরে হাসতে হাসতে ফেটে পড়ছি। কারণ ভিসি স্যারের চেহারা দেখার মত ছিলনা।  যা হোক তিনি আমাদের সমাধানের আশ্বাস দেন সেদিন আর হই হই করতে না করেন।

ঘটনা সেখানেই শেষ না। সোহাগ ভাই আমাকে আর কেয়াকে ধরে নিয়ে গেলেন দৈনিক বাংলাদেশ সময় পত্রিকার অফিসে। সেখানে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, এ হচ্ছে নোমান, আপনাদের নতুন সাংবাদিক লাগবে বলেছিলেন না? ওকে নিয়ে নেন। আমি হতভম্ব। আর আমাকে বললেন সন্ধায় রুমে আসবা। খবর কিভাবে লেখে শিখায় দিব।

সারাদিন টো টো করে পার করে সন্ধ্যায় গেলাম সোহাগ ভাইয়ের রুমে। আমার ভুল না হলে রুম নাম্বার ছিল ৪০৭। ওইদিকে ক্যাম্পাসে ঘটে গেছিল আরো কিছু অঘটন। সেগুলো অত পরিস্কার মনে না থাকলেও এইটুকু মনে আছে যে সিন্ডিকেটের কোন একটা মিটিং এর পরে জয়েন্ট সেক্রেটারি ছাত্রদের নিয়ে কিছু একটা বাজে কথা বলেছিলেন। সেই থেকে ঝামেলার সূত্রপাত। ছাত্ররা প্রভোস্ট রুমের জানালা ভাংচুর করেছিল। এতসব ঘটনা সোহাগ ভাই বললেন, সামনে বসে লেখ। ওদিকে আমার মাথায় কিছুই নেই। কিচ্ছু আসে না তখন। মাঝে মাঝে সিগারেট ফুকার অভ্যাস তখন ছিল। সোহাগভাই ননস্মোকার। আমার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে বললেন, কী ? ধুয়া লাগবে? যাও বারান্দায় গিয়ে ধুয়া দিয়ে দেখ কিছু বের হয় নাকি। সোহাগ ভাইএর ছোট ভাই শাকিল তখন ঢাকায়। সোহাগ ভাইয়ের সাথেই থাকে। (আমাজ ভাই তখন মনে হয় রুমে ছিলেন না। খেতে গিয়েছিলেন।) নন স্মোকার শাকিলের সাথে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে সিগারেটে টান দিতে দিতে গল্প করি। কিন্তু কিছুতেই আর কিছু বের হয় না। নাহ, খবর লেখা আমাকে দিয়ে হবে না আর। সোহাগ ভাইয়ের সামনে পুরাই বেইজ্জতি। খবর বের হয়নি ঠিক তবে কবিতা বের হয়েছিল। অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ছন্দ বের হয়েছিল কিছু। সেই কবিতা লেখা দেখে সোহাগ ভাই খুব হেসেছিলেন। আর পরে যে কয়দিন দেখা হয়েছিল তার সাথে, প্রথম লাইন তার মনে থাকত আর সেটা ধরেই আমাকে ডাকতেন।

ছন্দমূল্য খুব দামি হয়ত হবে না। কিন্তু আমার কাছে আমার স্মৃতির মূল্য অসীম। ওই সময়গুলার মূল্য আমার কাছে অসীম। সোহাগ ভাউ, তোমারে মিস করি। তোমার অসাধারণ মনোশক্তির একটা অংশ তুমি আমার ভিতর সযতনে ঢুকিয়ে দিয়েছ। এটা নিয়ে আজ আমি সামনে এগোচ্ছি।

সোহাগ ভাউ, তুমি ভালো থেকো সব সময়।
তুমি তরুন থেকো সব সময়।
বার্ধক্য যেন কখনো তোমাকে স্পর্শ না করে।

No comments:

Post a Comment