Orobanche aegyptiaca
অরোবাংকি এক প্রকার সপুষ্পক পরজীবী উদ্ভিদ। সরিষার পরজীবি উদ্ভিদের মধ্যে অরোবাংকিই উল্লেখযোগ্য এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। বংশ বৃদ্ধি সরিষা গাছের উপর নির্ভরশীল। এর বীজ মাটিতেই অবস্থান করে।
বিকল্প পোষক উদ্ভিদ সমুহঃ
সরিষা, টমেটো, আলু, তামাক, বেগুন, মরিচ, গাজর, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি।
রোগ উপযোগী আবহাওয়াঃ
উচ্চ তাপমাত্রা ১২-১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, ৭০% আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং উচ্চ pH যুক্ত মাটিতে অরোবাংকির প্রকোপ দেখা যায়। সাধারণত যেসব ফসলে সেচ দিতে হয়, সেসব ফসলে এটি দেখা যায়।
১) আক্রান্ত সরিষা গাছের গোড়ায় পরজীবী গাছ খালি চোখেই দেখা যায়।
২) অরোবাংকির ফুল রক্তাভ রঙ এর এবং খালি চোখেই দৃশ্যমান।
৩) পরজীবী আক্রান্ত সরিষা গাছে পানির ঘাটতিজনিত লক্ষণ দেখা যায়।
৪) পাতা হলদে হয়ে যায়।
৫) গাছ দুর্বল হয়, বৃদ্ধি কমে যায় এবং খাট হয়ে যায়।
৬) ফলন কমে যায়।
লক্ষণ স্থানঃ
এ পরজীবী উদ্ভিদ সরিষা গাছের শেকড়ের সাথে সংযোগ স্থাপন করে খাদ্য সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে।
| চিত্রঃ Orobanche aegyptiaca |
পরজীবী উদ্ভিদের বিস্তারঃ
মাটি, ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, সেচের পানি প্রভৃতির মাধ্যমে অরোবাংকির উৎপত্তি ও বিস্তার ঘটে। বারবার একই জমিতে সরিষা পরিবারের ফসল চাষ করলে এ পরজীবীর বিস্তার ঘটে।
রোগ চক্রঃ
একটি মাত্র ফুল থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র (০.১৫ - ০.৫ মিমি) শত থেকে হাজার বীজ হতে পারে। ক্ষুদ্র বীজগুলো বাতাস, ছোট প্রাণী, মানুষ, যন্ত্র ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে খুব সহজেই। সুপ্তাবস্থায় মাটিতে বেঁচে থাকতে পারে ১৫ বছর পর্যন্ত। বীজ মাটিতে পড়ার পর সুপ্তাবস্থায় চলে যায়। বীজ মাটিতে পড়ে শুকনো সময়ে প্রয়োজনীয় পরিপক্কতায় পৌছায়।
বৃষ্টি এলে ১-৩ সপ্তাহের মধ্যে শুকনো বীজ পানি শুষে নেয় এবং অঙ্কুরোদগমের জন্য তৈরি হয়। এই অবস্থায় বীজ অনেক মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। যখন তাপমাত্রা ৭০-৮০ ডিগ্রী ফারেনহাইট হয় তখন পোষক উদ্ভিদের শেকড় থেকে আগত রাসায়নিক সঙ্কেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বীজ অঙ্কুরোদগম করে। যদি কোন কারণে পরজীবী উদ্ভিদের বীজ সঠিক সময়ে অঙ্কুরোদগম করতে না পারে তবে তা আবার শুকিয়ে সুপ্তাবস্থায় ফিরে যায় এবং পরবর্তি বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করে।
অঙ্কুরোদগমের পর বীজ জার্ম টিউব বা শেকড় তৈরি করে যা পোষক উদ্ভিদের শেকড়ের দিকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। পোষক উদ্ভিদের শেকড়ে পৌছালে জার্ম টিউব থেকে হস্টরিয়া তৈরি হয় যা পরজীবী উদ্ভিদ কে পোষক শেকড়ের সংবহনতন্ত্রে (vascular system) প্রবেশ করতে এবং সেখানে আটকে থাকতে সহায়তা করে। সেখান থেকেই পরজীবী উদ্ভিদ পোষক উদ্ভিদ থেকে পানি এবং পুষ্টি শুষে নেয়।
অঙ্কুরোদগমের পর বীজ জার্ম টিউব বা শেকড় তৈরি করে যা পোষক উদ্ভিদের শেকড়ের দিকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। পোষক উদ্ভিদের শেকড়ে পৌছালে জার্ম টিউব থেকে হস্টরিয়া তৈরি হয় যা পরজীবী উদ্ভিদ কে পোষক শেকড়ের সংবহনতন্ত্রে (vascular system) প্রবেশ করতে এবং সেখানে আটকে থাকতে সহায়তা করে। সেখান থেকেই পরজীবী উদ্ভিদ পোষক উদ্ভিদ থেকে পানি এবং পুষ্টি শুষে নেয়।
ফেব্রুয়ারী থেকে মে মাসের মধ্যে অরোবাংকি মাটির উপরে ফুল দেয়। একটি মাঝারি আকারের অরোবাংকি তে ৪০০ টির বেশি ফুল ধরতে পারে যার প্রতিটিতে ৫০০ টির বেশি বীজ হয়।
১০-১৫ সপ্তাহের মধ্যে অরোবাংকির জীবনচক্র সম্পন্ন হয়।
ব্যবস্থাপনাঃ
জমি সম্পুর্ণভাবে অরোবাংকি মুক্ত করতে প্রায় ১৫-২০ বছর লেগে যেতে পারে যেহেতু এর বীজ ১৫ বছর পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় মাটিতে থাকতে পারে।
১) ভেজা মাটিতে স্বচ্ছ পলিথিন বিছিয়ে কড়া সুর্যের আলোতে জমি ফেলে রাখলে উচ্চ তাপে বেশিরভাগ পরজীবী বীজ নষ্ট হয়ে যায় এবং বাকি বীজ পরের ঋতুর জন্য সুপ্তাবস্থায় চলে যায়।
২) হাতে তুলে অরোবাংকি দমন করা যায় কার্যকরভাবে, কেননা পোষক শেকড় ছাড়া এ পরজীবী কোন ভাবেই আর বাঁচতে পারে না।
৩) ফাঁদ পোষক যেমন শন, তিসি, মুগ, ভুট্টা, জোয়ার চাষ করলে পরজীবী বীজ অঙ্কুরিত হবে কিন্তু আক্রমন করতে পারবে না। আবার কিছু শস্যে অরোবাংকি আক্রমন করে। কিন্তু ফুল আসার আগেই সেগুলো সমেত ধ্বংস করে ফেললে এর প্রকোপ কমে আসে।
৪) Fusarium solani ছত্রাক ব্যবহার করা হলে এর বিষক্রিয়ায় পোষক উদ্ভিদের ক্ষতি সাধন ছাড়াই অরোবাংকি বিনষ্ট হয়।
ছবি ও তথ্যসূত্রঃ
১) http://www.infokosh.bangladesh.gov.bd২) http://en.wikipedia.org
৩) http://jnkvv.nic.in
No comments:
Post a Comment