Monday, July 22, 2013

বাংলাদেশের দারিদ্র্য

দারিদ্র্যের সংজ্ঞাঃ

দারিদ্র্য অর্থ হচ্ছে দরিদ্র অবস্থা, অভাব ও দীনতা। (সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, পৃঃ ২৭৭)।

দারিদ্র্য বলতে এমন ব্যক্তি বা দেশকে বুঝায় যার সামান্য সম্পদ ও অল্প আয় রয়েছে, যা দ্বারা ন্যূনতম মৌলিক প্রয়োজন (Basic Needs) মেটাতে ব্যর্থ। ( মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম, প্রবন্ধ: দারিদ্র্য বিমোচন : ইসলামী প্রেক্ষিত, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পত্রিকা, জানুয়ারী-মার্চ ২০০৯ইং, পৃঃ ৯৩।)

ডেলটুসিং বলেন,'মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় সম্পদের অপ্রতুলতাই হল দারিদ্র্য'

থিওডরসনের মতে, 'দারিদ্র্য হল প্রাকৃতিক, সামাজিক ও মানসিক উপোস' 


ইসলামের দৃষ্টিতে দারিদ্র্য হচ্ছে এমন এক অবস্থা, যা মানব জীবনের অব্যাহত প্রয়োজনীয় পণ্য বা মাধ্যম উভয়েরই অপর্যাপ্ততা বুঝায়।

অর্থ্যাৎ সহজ কথায় চাহিদা পূরনের অক্ষমতা কে দারিদ্র্য বলা হয়। যখন কোন ব্যাক্তি অভাবের মধ্যে বিরাজমান থাকেন, সে অবস্থাকেই দারিদ্র্য বলা চলে।

দারিদ্র্যের প্রকারভেদঃ
    ১) স্বাভাবিক দারিদ্র্য
    ২) তুলনামূলক দারিদ্র্য

১) স্বাভাবিক দারিদ্র্যঃ
মৌলিক চাহিদা মেটানোর অক্ষমতাকে স্বাভাবিক দারিদ্র্য বলা হয়ে থাকে। অর্থ্যাত যখন এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে কোন ব্যাক্তি তার নিজের মৌলিক চাহিদাসমূহ যেমন, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির কোন একটি মেটাতে অক্ষম থাকেন, সে অবস্থা কে স্বাভাবিক দারিদ্র্য বলা যেতে পারে। 

২) তুলনামূলক দারিদ্র্যঃ
বিলাসী চাহিদা বা অন্যের সাথে তুলনা করে যে চাহিদা মেটানোর অক্ষমতা তাকে তুলনামূলক চাহিদা বলা হয়। যেমন, নিজস্ব গাড়ির চাহিদা। 

স্বাভাবিক দারিদ্র্যের মাপকাঠিঃ
বাংলাদেশে স্বাভাবিক দারিদ্র্য নির্ণয় করা হয় খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে। কোন ব্যাক্তির ২১২২ কিলো ক্যালোরি খাদ্য গ্রহণ করার সামর্থ্য না থাকলে তাকে স্বাভাবিক দারিদ্র্য ধরা হয়। ১৮০৫ কিলো ক্যালোরি খাদ্য গ্রহণের সামর্থ্য না থাকলে তাকে চরম দারিদ্র্য ধরা হয়। 

ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক এর মাপকাঠিতে দৈনিক ২ ডলারের কম উপার্জন কে স্বাভাবিক দারিদ্র্য এবং ১ ডলারের কম উপার্জন কে চরম দারিদ্র্য বিবেচনা করা হয়।

দারিদ্র্যের কারণঃ
১)  জনসংখ্যার আধিক্য।
২)  মাথাপিছু আয় স্বল্পতা।
৩)  কৃষি নির্ভর অর্থনীতি।
৪)  সম্পদের অসম বন্টন।
৫)  শিক্ষায় অনগ্রসরতা।
৬)  শিল্পে অনগ্রসরতা
৭)  দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাব।
৮)  দূর্নীতি।

৯)  সামাজিক বিশৃঙ্খলা।
১০) মূলধনের স্বল্পতা।
১১) কর্মসংস্থানের অভাব।
১২) নিম্ন মজুরী।
১৩) দক্ষ জনশক্তির অভাব।

১৪) সম্পদের স্বল্পতা।
১৫) চাকুরী নির্ভরতা। 


বাংলাদেশে দারিদ্র্যের গতিধারাঃ


সাল ১৯৭৫ ১৯৮৫ ১৯৯৫ ২০০৫ ২০১২
স্বাভাবিক দারিদ্র্য % ৬৩.৫ ৬০.২ ৫৫. ৪৯.৭ ৪৫.১
চরম দারিদ্র্য % ৫৫.২ ৫৩.১ ৫০.১ ৪৬.৩ ২৬.৩






চিত্রঃ বাংলাদেশের দারিদ্র্যের লেখচিত্র।

দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা সমুহ (সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী)

১) নগদ সহায়তা কর্মসূচীঃ
- কাবিটা কাজের বিনিময়ে টাকা।
- দুস্থ্য ভাতা
- বিধবা ভাতা
- অস্বচ্ছল ভাতা
- স্বামী পরিত্যাক্ত মহীলাদের ভাতা

২) খাদ্য সহায়তা কর্মসূচীঃ
- কাবিখাঃ কাজের বিনিময়ে খাদ্য।
- VGF: Vulnerable Group Feeding
- VGD: 
Vulnerable Group Development
- কাবিখাঃ কাজের বিনিময়ে খাদ্য।
- গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন কর্মসূচী, (TR: Test Relief) 
- GR: Gratuitous Relief
- পল্লী রক্ষনাবেক্ষন কর্মসূচী (RMP: Rural Maintenance Program)

৩) কর্মসংস্থান সহায়তাঃ- একটি বাড়ি একটি খামার।
- যুব উন্নয়ন প্রকল্প।  
- মৎস্য চাষ প্রকল্প। 

৪) অন্যান্যঃ
- ঘরে ফেরা কর্মসূচী।
- ভিক্ষুক পূনর্বাসন
- আশ্রয়ণ কর্মসূচী

দারিদ্র্য বিমোচনের সুপারিশ সমূহঃ
১)  জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর
২)  দূর্নীতি রোধ
৩)  মানব শিক্ষার উন্নয়ন।
৪)  কর্মমূখী শিক্ষার প্রচলন
৫)  সম্পদের সুষম বন্টন
৬)  বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
৭)  জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি
৮)  মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি।
৯)  বিভিন্ন শিল্পের প্রসার।
১০) বিশৃঙ্খলা রোধ করণ। 
১১) দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা।
১২) রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।
১৩) অবকাঠামোগত উন্নয়ন।
১৪) উদ্যোক্তা তৈরি।
১৫) নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি।
১৬) মূলধনের যোগান দেওয়া।
১৭) সরকারী ও বেসরকারী কর্মসূচী গ্রহণ।






 

No comments:

Post a Comment